প্রতিবেদক : যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি ওয়াজ উদ্দিনের মৃত্যুর নয় মাস পরেও তাকে পলাতক দেখিয়ে মামলা চলার ঘটনায় পুলিশ বিভাগের গাফিলতির জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
আদালতের তলবে পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে আইনজীবী এ এম আমিনউদ্দিনের মাধ্যমে ক্ষমার আবেদন করেন।
বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল শুনানির পর এসপিকে সতর্ক করে দিয়ে তার ক্ষমার আবেদন মঞ্জুর করেন। আদেশে পুলিশের গাফিলতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারক বলেন, “এখন ট্রাইব্যুনালের আদেশে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। নাক সিঁটকানো ভাব পুলিশ বিভাগের।”
মৃত ওয়াজ উদ্দিনকে পলাতক দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেখানে তার বদলে আইনজীবীর স্বাক্ষর থাকায় ওই ব্যাখ্যা গ্রহণ করেনি আদালত।
বিচারক আইজিপিকে দশ দিনের মধ্যে নিজের স্বাক্ষরে এ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা আদালতে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু জানান। অবহেলার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপারের ব্যাখ্যায় বলা হয়, এ বিষয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আর আইজিপির ব্যাখ্যায় গাফিলতির জন্য একজন পুলিশসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও কী শাস্তি হয়েছে- তা উল্লেখ করা হয়নি।
ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়, “আদালত একটি আদেশ দিয়েছিলে, যেটি যথাযথভাবে পালিত হয়নি। এটা বিচার ব্যবস্থার প্রতি বড় ধরনের দায়িত্বে অবহেলা।
পলাতক অবস্থায় মারা যাওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ মামলায় ময়মনসিংহের ওয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা চলার ঘটনায় গত ১২ জানুয়ারি অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত। এর পেছনে কার গাফিলতি রয়েছে, তা তদন্ত করতে সেদিনই প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষকে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়।
গত ১১ জানুয়ারি একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত ‘মৃত ওয়াজ উদ্দিনকে পলাতক ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের নজরে এলে ওই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার বাসিন্দা ওয়াজ উদ্দিন ২০১৬ সালের ৭ মে মারা যান। তারপরও গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ওয়াজ উদ্দিন ও রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে এ মামলার বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন গত ১৯ জানুয়ারি মৃত ওয়াজ উদ্দিনকে এ মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন জানালে শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে।
সেইসঙ্গে গাফিলতির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপারকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে তলব করা হয়। পুলিশ মহাপরিদর্শককেও লিখিতভাবে তার ব্যাখ্যা জমা দিতে বলা হয়।