1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন

ধর্মঘটের পর মাংসের দাম লাগাম ছাড়া

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
  • ৪৩৯ বার

প্রতিবেদক : মাংস ব্যবসায়ীদের ছয় দিনের ধর্মঘট শেষ হয়েছে গত শনিবার। তবে গরুর মাংস নিয়ে অরাজকতা কাটেনি। উল্টো এর মাংসের দাম বেড়ে গেছে আরও কয়েক ধাপ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাংসের দাম একেক রকম। এক কেজি গরুর মাংসের দাম কোথাও ৫৩০ টাকা, কোথাও ৪৮০ টাকা, কোথাও-বা ৪৬০ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে গরুর মাংস কিনতে গিয়ে ক্রেতাদের সাজতে হচ্ছে গোবেচারা।

ধর্মঘটের আগে গরুর মাংসের প্রতি কেজির মূল্য ছিল ৪৪০ থেকে ৪৫০ টাকা। ধর্মঘট শেষ হওয়ার পর ইচ্ছেমতো দাম রাখা হচ্ছে। মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই তাঁরা এখন যেমন খুশি দাম রাখছেন।

এদিকে মাংসের বাজার নিয়ে অস্থিতিশীলতার জন্য সংশ্লিষ্টরা একে অপরকে দুষছেন। মাংস ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে ইজারাদারেরা পশুর হাটে নির্ধারিত খাজনার চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি আদায় করছেন। অন্যদিকে, ইজারাদার পাল্টা অভিযোগে বলছেন, মাংস ব্যবসায়ীরা হাট থেকে পশু কিনে হাটের বাইরে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে খাজনার টাকা থেকে কমিশন নিচ্ছেন। এতে ইজারাদারেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ধর্মঘট শুরু করে ঢাকা মেট্রোপলিটন মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত হারে খাজনা, বৈধভাবে ভুটান ও মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি, ট্যানারি স্থানান্তর করে চামড়া বিক্রির সুযোগ ও ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাউল ইসলাম ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের অপসারণ এবং গরু আনায় চাঁদাবাজি বন্ধ। দাবির বাস্তবায়ন করা হলে ৩০০ টাকা দরে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি করা যাবে বলে জানিয়েছিলেন মাংস ব্যবসায়ীরা। ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ধর্মঘট স্থগিত করেন তাঁরা। শনিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ না থাকায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বাণিজ্যসচিব দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম। তিনি অভিযোগ করেন, আশ্বাস পেলেও বাড়তি খাজনা আদায় করা হচ্ছে গাবতলীর গরুর হাট থেকে। ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হকের সঙ্গেও কোনো বৈঠক হয়নি তাঁদের। তাই বাড়তি দামে গরু কিনতে হচ্ছে। মাংসের দামও তাই বেশি। ডিএনসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাউল ইসলাম ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশ করে ইজারাদারেরা অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছেন।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে কর্মরত সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া বলেন, এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন তার দায়িত্ব পালন করছে না। তাদের কারণেই আজ ভোক্তাদের কষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা উচিত। পশুর হাটে গিয়ে পর্যবেক্ষণ দল সমস্যাগুলো খতিয়ে দেখতে পারে। পশু সরবরাহের বিষয়টিও নজরদারিতে আনা উচিত। যখন পশু বিভিন্ন জায়গা থেকে আনা হয়, তখন তল্লাশির নামে ব্যাপারীদের হয়রানি করা হয়। সেগুলোর বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এখন মাংস ব্যবসায়ীরা ধর্মঘটের নামে উল্টো মাংসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

মাংসের বাজারের হালচাল: মিরপুর ১১ নম্বরে মাংস বিক্রির দোকান রয়েছে আবেদ কালুর। আজ সোমবার ভোরে চারটি গরুর জবাই করে তিনি দোকানে এনে মাংস কাটা শুরু করেন। ক্রেতাদের ভিড় তেমন নেই। তবে মাংসের দাম বেশ চড়া। প্রতি কেজি ৪৬০ টাকা। ধর্মঘটের আগে তাঁর দোকানেই এই মূল্য ছিল ৪৪০ টাকা।

আবেদ কালু বলেন, ‘আমাদের ধর্মঘট আমলেই নেওয়া হয়নি। খাজনা বেশি আদায় করছে গাবতলী হাটের ইজারাদার। এখন বাড়তি দামে মাংস বিক্রি করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই।’

আবেদ কালু জানান, একটি গরুর জন্য সিটি করপোরেশন ৫০ টাকা খাজনা নির্ধারণ করে দিয়েছে। অথচ গাবতলীর হাটে খাজনা রাখা হয়েছে ২০০ টাকা। চারটি গরু বাবদ তাঁকে মোট ৮০০ টাকা খাজনা দিতে হয়েছে।

আধা কিলোমিটার দূরে মিরপুর ১০ নম্বর বাজারে মো. শামীমের দোকানে মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজিতে।

আরও কিছু দূর এগোলে সেনপাড়ায় বিপ্লবের দোকানে এর মূল্য ৪৮০ টাকা। বিপ্লব জানান, গাবতলী হাটে তাঁর কাছে একটি গরুর খাজনা নেওয়া হয়েছে ৪০০ টাকা।

খিলগাঁও, রায়েরবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আজ সকাল থেকে মাংস বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকা কেজি।

সুপার শপগুলোতেও গরুর মাংসের দামে রকমফের রয়েছে। স্বপ্নের আউটলেটগুলোয় মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৯০ টাকা। মীনা বাজারে এর মূল্য ৫৩০ টাকা, কেরি ফ্যামিলিতে ৪৭৫ টাকা।

স্বপ্নের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরবরাহের ওপরই তাঁদের গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করতে হচ্ছে। অল্প কিছু হলেও লাভ ছাড়া তো ব্যবসা করা যায় না।

ইজারাদারদের অভিযোগ: গাবতলী পশুর হাটের ইজারাদারেরা পুরো বিষয়টির জন্য দায়ী করছেন মাংস ব্যবসায়ীদের। হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত ১৮ জানুয়ারি ডিএনসিসি ও মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ব্যবসায়ীদের নিজস্ব দোকানেই মাংস ঝুলিয়ে বিক্রি করতে হবে। অন্য কোথাও বিক্রি করা যাবে না। ডিএনসিসির ট্রেড লাইসেন্স যাদের কাছে আছে, তাদের কাছেই নির্ধারিত হারে খাজনা নেওয়া হবে। আমরা আইনের বাইরে যাব না।’

ইজারাদারেরা জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাংস ব্যবসায়ীদের গরুপ্রতি ৫০ টাকা, মহিষের জন্য ৭০ টাকা ও ছাগলের জন্য ১৫ টাকা করে খাজনা দিতে হয়। সাধারণ ক্রেতাদের জন্য খাজনা পশুর দামের শতকরা সাড়ে ৩ টাকা। এই সুযোগের অপব্যবহার করে মাংস ব্যবসায়ীরা হাট থেকে পশু কিনে হাটের বাইরে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে খাজনার টাকা থেকে কমিশন নিচ্ছেন। এতে ক্ষতি হচ্ছে ইজারাদারের।

খাজনা পুনর্নির্ধারণ করবে ডিএনসিসি: নগরবাসী যেন কম দামে মাংস কিনতে পারে, সে জন্যই গরু, মহিষ ও ছাগলের খাজনায় ছাড় পান মাংস বিক্রেতারা। তবে এর সুবিধা নগরবাসীর মিলছে না। ফায়দা তুলছে মাংস ব্যবসায়ীরা। এমনই মনে করেন ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ জন্য ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতা সবার জন্য খাজনার হার ১ শতাংশের প্রস্তাব মেয়র আনিসুল হকের কাছে দেওয়া হয়েছে।

খাজনা পুনর্নির্ধারণের জন্য মাংস ব্যবসায়ী, ইজারাদার ও ডিএনসিসির একটি বৈঠক আগামী বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরবরাহ ঠিক থাকলে এক-দুই দিনের মধ্যে দাম এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। হাসিলের মূল্য পুনর্নির্ধারণে বৈঠক ডাকা হয়েছে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog