1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন

তেলাপোকা কেন চিৎ হয়ে মৃত্যুবরণ করে?

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৭
  • ৩৮৮ বার

বলা হয়ে থাকে, পারমাণবিক যুদ্ধে যদি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীর সব প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত যে অল্প কিছু প্রাণী বেঁচে থাকতে পারবে, তাদের মধ্যে তেলাপোকা অন্যতম। এর অর্থ অবশ্য এই নয় যে, তেলাপোকা অমর। বরং এই ধারণা এসেছে এই কারণে যে, তেলাপোকা অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে। এরা পানি ছাড়া প্রায় এক সপ্তাহ এবং কোনো খাবার ছাড়া প্রায় এক মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এমনকি, কোনো আঘাতে তেলাপোকার মাথা তাদের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও তারা খুব দ্রুত কাটা জায়গার ছিদ্র বন্ধ করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে!

কিন্তু তা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট জীবনসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর, শত্রুর আক্রমণে অথবা কীটনাশক প্রয়োগে নিয়মিতই তেলাপোকা মৃত্যুবরণ করে। এদের মধ্যে যেগুলো মানুষের বাসাবাড়িতে মৃত্যুবরণ করে, তাদের অধিকাংশকেই পিঠ নিচের দিকে দিয়ে উল্টো হয়ে মারা যেতে দেখা যায়। কেন তেলাপোকা চিৎ হয়ে মৃত্যুবরণ করে, বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা বিভিন্ন সময় এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তেলাপোকার চিৎ হয়ে মৃত্যুবরণ করার একটি বড় কারণ হচ্ছে মৃত্যুর সময়ে এর শারীরিক সক্ষমতা হ্রাস পাওয়া। স্বাভাবিক অবস্থায় উল্টে গেলেও এরা এদের লম্বা পাগুলো ব্যবহার করে সহজেই আবার নিজেদেরকে সোজা করে ফেলতে পারে। কিন্তু জীবনের শেষ দিকে যদি কোনো কারণে এরা উল্টে যায়, তখন আবার সোজা হওয়ার জন্য পেশীতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয়, তার যোগান দিতে না পারায় এরা আর সহজে সোজা হতে পারে না এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

লম্বা লম্বা ছয় পা বিশিষ্ট তেলাপোকাকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য পায়ের পেশী শক্তিকে কাজে লাগাতে হয়। শরীরে যথেষ্ট পুষ্টি থাকতে হয় পায়ের পেশীতে নিয়মিত রক্ত সরবরাহ করার প্রয়োজন হয়। বৃদ্ধকালে অথবা অসুস্থ অবস্থায় এদের পক্ষে তাই পায়ের উপর শরীরের ভর রেখে দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। সে সময় এদের পাগুলো দুর্বল হয়ে বাঁকা এবং ভাঁজ হয়ে আসে। এরকম অবস্থায় যদি কোনোভাবে এদের শরীর উল্টে যায়, তাহলে পাগুলোকে স্বাভাবিক ভাঁজ হয়ে থাকা অবস্থা থেকে সোজা করে তার উপর ভর দিয়ে সোজা হওয়া এদের পক্ষে সম্ভব হয় না।

আমরা যদি টেবিলের উপর আমাদের তালু উপরের দিকে রাখি, তাহলে দেখব যে স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের হাতের আঙ্গুলগুলো কিছুটা বাঁকা এবং ভাঁজ হয়ে থাকবে। আঙ্গুলগুলোকে সোজা করার জন্য আমাদের পেশীশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। দুর্ঘটনাক্রমে চিৎ হয়ে যাওয়া তেলাপোকার অবস্থাও অনেকটা সেরকম হয়। সোজা হতে না পারায় ধীরে ধীরে পানি এবং খাবারের অভাবে দুর্বল হয়ে তারা মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

এছাড়াও তেলাপোকার পাগুলো লম্বা হওয়ার কারণে এদের দেহের ভারকেন্দ্র বেশ উঁচুতে অবস্থিত। শক্তিশালী অবস্থায় অবশ্য এতে এদের চলাফেরায় কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু মৃত্যুকালীন শারীরিক দুর্বলতার কারণে এদের পক্ষে লম্বা পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। তাদের পা ভাঁজ হয়ে আসে এবং মাটিতে বসে পড়ার পর তাদের পিঠের বক্রাকার এবং মসৃণ গঠনের কারণে অনেক সময়ই তারা নড়াচড়া করতে গিয়ে চিৎ হয়ে যায়।
আবাসিক তেলাপোকার মসৃণ তল ভীতি

যদিও আমাদের বাসাবাড়িতে প্রায়ই তেলাপোকা দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু অধিকাংশ তেলাপোকাই আসলে ঘরবাড়ির কৃত্রিম পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে না। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে প্রায় ৫,০০০ প্রজাতির তেলাপোকা আছে। কিন্তু এদের অধিকাংশই বনে-জঙ্গলে বসবাস করে। এদের মধ্য মাত্র আধ ডজন থেকে দশ প্রকার তেলাপোকা আবাসিক এলাকায় বসবাসের উপযোগী।

কিন্তু তারপরেও প্রায় সময়ই অনেক ভিন্ন প্রজাতির তেলাপোকা ভুল করে মানুষের বাসায় ঢুকে পড়ে। একবার প্রবেশ করলে এরা সেখান থেকে আর সহজে বের হওয়ার পথ খুঁজে পায় না। এই ধরনের তেলাপোকা বনে-জঙ্গলে বসবাসে অভ্যস্ত বলে মনুষ্য নির্মিত মসৃণ টাইলসের মেঝে এদের চলাচলের জন্য খুবই অনুপযোগী। মসৃণ তলের উপর চলাফেরা করতে তো এদের সমস্যা হয়ই, কিন্তু কোনোভাবে যদি একবার উল্টে যায়, তাহলে সোজা হয়ে দাঁড়ানো এদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

বনে-জঙ্গলে চলাফেরা করা এ ধরনের তেলাপোকার জন্য বেশ সহজ। সেখানে কোনোভাবে উল্টে গেলেও ঘাস, গাছের লতাপাতা, ছোটছোট ডাল, ময়লা-আবর্জনা যেকোনো কিছুকে আঁকড়ে ধরে এরা সহজেই নিজেদেরকে সোজা করে নিতে পারে। কিন্তু মানুষের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাড়ির মসৃণ মেঝেতে একবার কোনোভাবে উল্টে গেলে এরা আঁকড়ে ধরার মতো কিছু খুঁজে পায় না। তাই শুধু বৃদ্ধ বা অসুস্থ তেলাপোকা না, বরং সুস্থ-সবল তেলাপোকাও একবার চিৎ হয়ে গেলে যদি কেউ তাকে সাহায্য না করে, তবে ধীরে ধীরে সেটি মৃত্যুবরণ করে।

তবে এরকম ক্ষেত্রে তেলাপোকা বেশ বুদ্ধির পরিচয় দেয়। একবার চিৎ হয়ে যাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করেও সোজা হতে না পারলে তারা মৃতের ভান করে পড়ে থাকে। তখন যদি কোনো শত্রু প্রাণী তাদেরকে স্পর্শ করে, অথবা মানুষ যদি ঝাড়ু বা অন্য কিছু দিয়ে তাদেরকে সরানোর চেষ্টা করে, সাথে সাথে এটি সেই প্রাণী অথবা ঝাড়ুকে আঁকড়ে ধরে সোজা হয়ে উঠে এবং পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে।
কীটনাশকের প্রভাব

সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য তেলাপোকার ছয়টি পাকে বিশেষভাবে ভাঁজ হয়ে থাকতে হয়। এটি শুধুমাত্র পুষ্টি এবং রক্তপ্রবাহের উপরেই নির্ভর করে না, বরং প্রতি জোড়া পায়ের মধ্যে বিস্তৃত একগুচ্ছ স্নায়ুতন্ত্রের উপরও নির্ভর করে, যেগুলো প্রতিনিয়ত উদ্দীপনা প্রদানের মাধ্যমে পাগুলোর নড়াচড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। তেলাপোকা যে মাথা ছাড়াও চলাফেরা করতে পারে, এটি তার অন্যতম একটি কারণ।

তেলাপোকার উপর আমরা যেসকল কীটনাশক প্রয়োগ করি, তাদের অধিকাংশই নিউরোটক্সিন। অর্থাৎ এগুলো সরাসরি তেলাপোকার স্নায়ুতে বিষক্রিয়া ঘটায় এবং এদের স্নায়বিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে। এই বিষাক্ত কীটনাশকগুলো তেলাপোকার শরীর থেকে কোলিনেস্টেরেস নামক একপ্রকার এনজাইম তথা উৎসেচক নিঃসরণে বাধা প্রদান করে। এই উৎসেচকগুলোর কাজ হচ্ছে অ্যাসিটাইলকোলিন (ACh) নামক এক ধরনের জৈব যৌগকে বিভাজিত করা, যা স্নায়বিক কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করে।

কীটনাশকের কারণে কোলিনেস্টেরেসের নিঃসরণ কমে যাওয়ার ফলে তেলাপোকার স্নায়ুতন্ত্রে অতিরিক্ত ACh আসতে থাকে। এর ফলে এদের শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এদের পায়ের পেশীগুলো সংকোচিত হতে শুরু করে এবং মাঝে মাঝে অসাড় হয়ে যায়। ফলে এরা পায়ের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। যেহেতু এদের শরীরের ভারকেন্দ্র বেশ উপরে, তাই পায়ের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এরা চিৎ হয়ে পড়ে যায় এবং আর উঠতে না পেরে ধীরে ধীরে মৃত্যুবরণ করে।

তবে সব তেলাপোকাই যে চিৎ হয়ে মৃত্যুবরণ করে, এমন নয়। বরং বিজ্ঞানীদের মতে চিৎ হয়ে মৃত্যুবরণ করাটা তেলাপোকার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নয়, বরং ব্যতিক্রম। প্রকৃতিতে, বনে-জঙ্গলে যে বিপুল সংখ্যক তেলাপোকা বসবাস করে, তাদের ক্ষুদ্র একটি অংশই কেবল এভাবে মৃত্যুবরণ করে। অধিকাংশই পাখি বা অন্য কোনো শিকারের হাতে প্রাণ দেয়, আর বাকিরা চিৎ হয়ে গেলেও ঘাস, লতা-পাতা আঁকড়ে ধরে নিজেদেরকে কিছুটা হলেও সোজা রাখতে পারে। কিন্তু আমাদের বাসাবাড়িতে আমরা যেসব তেলাপোকা দেখি, তাদের অধিকাংশই উপরে উল্লেখিত কারণে চিৎ হয়ে মৃত্যুবরণ করে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog