তিন দশক ধরে অভিনয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন নন্দিত অভিনেতা তৌকির আহমেদ। মঞ্চে অভিনয়ের পাশাপাশি টেলিভিশনে হয়েছেন প্রশংসিত। শুধু তাই নয়, অভিনয়ের বাইরে গত এক দশক ধরে নির্মাতা হিসেবেও দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া ‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমা দিয়ে দর্শকদের রাঙিয়েছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) এই গুণী মানুষটির জন্মদিন। প্রথম প্রহর থেকেই পরিবার, প্রিয়জন আর ভক্ত অনুরাগীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন তিনি। দেখতে দেখতে জীবনের ৫৪ বসন্ত পার করে দিয়েছেন এই অভিনেতা ও নির্মাতা। জন্মদিনে তেমন কোন বিশেষ আয়োজন নেই বলে জানান তিনি।
তবে এবারে জন্মদিনের বছরটাতে তিনি একটি চমকপ্রদ কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। যা তার কাছে বিশেষ। সেটি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করছেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার শ্যাম বেনেগাল। সেখানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর চরিত্রে অভিনয় করবেন তৌকীর আহমেদ। নিজের ক্যারিয়ারের জন্য এটিকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি সংযোজন বলে মানছেন তিনি। সেটা যেমন অভিনয়ের জায়গায়, তেমনি চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে শ্যাম বেনেগালের সান্নিধ্য পাওয়ার তৃপ্তির জায়গাটিতেও স্পেশাল।
তৌকির আহমেদ বলেন, ‘এবারের জন্মদিনের প্রথম শুভেচ্ছাটি পেয়েছি স্ত্রী-সন্তানদের কাছ থেকে। স্ত্রী বিপাশা হায়াত, মেয়ে আরিশা আহমেদ ও ছেলে আরীব আহমেদ- তারাই সবসময়ই আমার জন্মদিনকে রাঙিয়ে তুলে। এছাড়াও আত্মীয়-বন্ধুরা ও শোবিজের সহকর্মীরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।’
১৯৬৫ সালের ৫ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন তৌকীর আহমেদ। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর স্থাপত্যে স্নাতক অর্জন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল এবং প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে।
১৯৯৯ সালে নন্দিত মডেল, অভিনেত্রী ও চিত্রশিল্পী বিপাশা হায়াতকে ভালোবেসে বিয়ে করেন তৌকীর আহমেদ। সেই সুখের দাম্পত্য জীবন আলোকিত করে রেখেছে তাদের এক কন্যা মেয়ে আরিশা আহমেদ ও পুত্র আরীব আহমেদ। তার শ্বশুর কিংবদন্তি অভিনেতা আবুল হায়াত। শ্যালিকা অভিনেত্রী নাতাশা হায়াত। নাতাশাকে আবার বিয়ে করেছেন আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা শাহেদ শরীফ খান।
স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা করলেও অভিনয় ও নির্মাণের স্বপ্ন ছিলো তৌকীরের হৃদয়ের গহীনে। তাই নিজেকে তিনি ছাত্রাবস্থাতেই তৈরি করেছিলেন মঞ্চে। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে পড়াকালীন তিনি মঞ্চ নাটকে অভিনয় শুরু করেন। এরপর ১৯৯৫ সালে লন্ডনের রয়্যাল কোর্ট থিয়েটার থেকে মঞ্চ নাটক পরিচালনার প্রশিক্ষন নেন এবং ২০০২ সালে নিউইয়র্ক ফিল্ম অ্যাকাডেমি থেকে চলচ্চিত্রে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন।
তৌকীর আহমেদ আশির দশকের মাঝামাঝিতে বিটিভি’তে প্রচারিত নাটকসমূহের রোমান্টিক চরিত্রের শীর্ষ অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক ‘নদীর নাম মধুমতী’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর তিনি তার শ্বশুর আবুল হায়াত পরিচালিত প্রথম নাটক ‘হারজিত’-এ অভিনয় করেন। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন তার স্ত্রী বিপাশা হায়াত।
২০০০ সালের পরপর অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নাট্য ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন। চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ঘটে ২০০৪ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘জয়যাত্রা’ পরিচালনার মাধ্যমে। চলচ্চিত্রটি আমজাদ হোসেন রচিত ‘একই’ নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। এই চলচ্চিত্র পরিচালনার মাধ্যমে তিনি ২০০৮ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ প্রযোজক, শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন।
২০০৬ সালে মুক্তি পায় তার চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় চলচ্চিত্র ‘রূপকথার গল্প’। চলচ্চিত্রটি ২০০৮ সালে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং দর্শকদের বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। ২০০৭ সালে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘দারুচিনি দ্বীপ’। রিয়াজ অভিনীত চলচ্চিত্রটি ২০০৮ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সাতটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে। চলচ্চিত্রটি বালি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-এ প্রদর্শিত হয় এবং দর্শকদের বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।
দীর্ঘ আট বছর বিরতির পর ২০১৬ সালে মুক্তি পায় শহীদুজ্জামান সেলিম, মোশাররফ করিম ও নিপুনকে নিয়ে তৌকীরের চতুর্থ চলচ্চিত্র ‘অজ্ঞাতনামা’। অবৈধ পথে বিদেশগামী মানুষের করুণ পরিণতির গল্প নিয়ে নির্মিত ছবিটি দর্শক মহলে দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। ছবিটি কান উৎসবসহ দেশ-বিদেশের নানা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়ে সুনাম অর্জন করেছে।
এরপরের ছবি ‘হালদা’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১৭ সালে। হালদা নদী আর এই নদীকে ঘিরে কিছু মানুষের জীবনের গল্প নিয়ে ছবিটি। এর আগে তিনি তৈরি করেন ‘অজ্ঞাতনামা’। গেল বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বশেষ মুক্তি পায় তার ‘ফাগুন হাওয়ায়’। বেশ প্রশংসিত হয়েছে ছবিটি।