1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

মার্টিনেজ যেন নব্বইয়ের সেই গায়কোচিয়া

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৭ জুলাই, ২০২১
  • ১৮১ বার

ফুটবলের অনুপম কারিগর, শিল্পী, সৃজন ও সৃষ্টিশীলতায় অনন্য লিওনেল মেসি আছেন। তার পাস থেকে লওতারো মার্টিনেজ গোলও করেছেন। বদলি খেলোয়াড় হিসেবে শেষদিকে মাঠে নেমে দারুন খেলে দলের আক্রমণভাগকে শানিত করেছেন ডি মারিয়াও। তারপরও আজ কোপার সেমির যুদ্ধে কলম্বিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার জয়ের নায়ক গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।

পেনাল্টি শ্যুট-আউটে কলম্বিয়ার তিনটি শট আটকে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছেন মার্টিনেজ। টাইব্রেকার শেষে গোলরক্ষককে নিয়েই যত আনন্দ-উল্লাস আর্জেন্টাইনদের।

বাড়াবাড়ির কিছু, আবেগতাড়িত সংলাপও নয়। এ মুহূর্তে শুধু দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনায় নয়, সারা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি আর্জেন্টাইন ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যমনি এখন মার্টিনেজ। পেনাল্টি শ্যুট-আউটের সময় অনবরত কথা বলে প্রতিপক্ষ শ্যুটারদের মনোযোগ-মনোসংযোগে খানিক চিড় ধরানোর কাজটি বেশ দক্ষতার সাথে করেছেন মার্টিনেজ।

পাশাপাশি বেশিরভাগ বড় ও দক্ষ গোলকিপাররা যেটা করেন, মার্টিনেজও তাই করলেন। আগে থেকে একটি দিক বেছে নিলেন এ আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক। বল যেদিকেই আসুক। কলম্বিয়ানরা যে দিকেই শট নিক না কেন, আমি আমার নিজের বাঁদিকেই ডাইভ দেব। দিয়েছেনও। তাতেই রক্ষা তিন-তিনটি পোনাল্টি কিক।

 

মার্টিনেজের অ্যান্টিসিপেশন, ক্ষিপ্রতা আর চপলতায় হতভম্ব কলম্বিয়ার তিন পেনাল্টি কিক নেয়া ডেভিনসন সানচেজ, ইয়েরি মিনা এবং এডউইন করডোনা। এ তিনজনের তিনটি শট রুখে আর্জেন্টিনাকে কোপা আমেরিকার ফাইনালে তুললেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ।

নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র থাকার পর সরাসরি টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি হওয়া ম্যাচে আর্জেন্টিনার ৩-২ গোলের জয়ের নায়ক তাই গোলকিপার মার্টিনেজ।

এদিকে মার্টিনেজের এমন অসাধারণ গোলকিপিং এবং কোপা আমেরিকার মত মহাদেশীয় ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসরে দলকে ফাইনালে তুলে দেয়া দেখে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের অনেকেরই মনে পড়ে গেলো সার্গেই গায়কোচিয়ার কথা। শুধু আর্জেন্টিনার সমর্থকদের কথা বলা বোধকরি ভুল হবে, গোটা ফুটবল বিশ্বের অনেকেই আজ সকালে পেনাল্টি শ্যুট আউটে মার্টিনেজের এমন ম্যাচ জেতানো নৈপুণ্য দেখে ফিরে গেছেন ৩১ বছর আগে।

সময়কাল, ১৯৯০ এর বিশ্বকাপ ফুটবল । ফুটবলের মহারাজ দিয়েগো ম্যারাডোনার অসামান্য নৈপুণ্য আর ক্যানেজিয়ার অসাধারণ ফিনিশিংয়ের পরও ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপ রানার্সআপ আর্জেন্টিনার সেরা পারফরমার ছিলেন সার্গেই গায়কোচিয়া। ওই গোলরক্ষকই আর্জেন্টিনাকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালে।

ভাবছেন কিভাবে? ম্যারাডোনার মত সর্বকালের সেরা আর ক্যানিজিয়ার মত কালজয়ী স্কোরার থাকার পরও সার্গেই গায়কোচিয়া সে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হিরো!

তাহলে শুনুন, ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে সার্গেই গায়কোচিয়া এসেছিলেন আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলরক্ষক হয়ে। এক নম্বর গোলরক্ষক ছিলেন পাম্পিডো। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে গ্রুপ ম্যাচে পায়ে ব্যাথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন পাম্পিডো।

তার আর ওই বিশ্বকাপ খেলা হয়নি। পাম্পিডোর বিকল্প হিসেবে মাঠে নামা সার্গেই গায়কোচিয়ার। পরে সেই ২ নম্বর গোলকিপার গায়কোচিয়াই হয়ে উঠলেন নায়ক। তার অসাধারণ নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনা উঠে যায় ফাইনালে।

প্রথম পর্ব শেষে নকআউট পর্বে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার জয়ের রূপকার যথারীতি দিয়েগো ম্যারাডোনা। ব্রাজিল সীমানায় বল পেয়ে অন্তত তিন থেকে চারজনকে শরীরের ঝাঁকুনি, পায়ের কারুকাজ আর গতিতে পিছনে ফেলে ব্রাজিল বক্সের ঠিক সামান্য বাইরে থেকে অসাধারণ এক পাস বাড়ান ম্যারাডোনা।

ব্রাজিলের মিডফিল্ডার ও দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারকে বডি ডজ ও ড্রিবলিংয়ে পরাস্ত করে ম্যারাডোনা যখন ডানদিক থেকে ছুটে আসা ক্যানেজিয়ার উদ্দেশ্যে বলটি বাড়ান তখন, তার শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারেননি। প্রায় মাটিতে শুয়ে ডান পায়ে খানিক বাঁকানো পাস বাড়িয়ে দেন কানেজিয়াকে।

ম্যারাডোনার সে নিখুঁত পাস ব্রাজিলের ডিফেন্ডারের পায়ের ফাঁক গলে বল চলে যায় ফাঁকা জায়গায়। আগুয়ান ব্রাজিল গোলকিপার তাফারেলকে এক ঝটাকায় কাটিয়ে ফাঁকা পোষ্টে বল ঠেলে দেন কানেজিয়া। খেলা শেষ হওয়ার অল্প কয়েক মিনিট আগের সেই গোলে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে যায় আর্জেন্টিনা। বিদায় নেয় ব্রাজিল।

আর কোয়ার্টার ফাইনালে যুগোশ্লাভিয়ার সাথে আর্জেন্টিনার ত্রাতা হন সেই পাম্পিডোর জায়গায় দলে আসা সার্গেই গাইকোচিয়া। নির্ধারিত সময় ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিট মানে, ১২০ মিনিটের লড়াই থাকে গোলশূন্য। টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনা জয়ী হয় ৩-২ গোলে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খবর ছিল, ওই টাইব্রেকারে গোল করতে পারেননি ফুটবল জাদুকর ম্যারডোনাও। তার বাঁ-পায়ের দূর্বল শট আটকে দেন যুগোশ্লাভ গোলকিপার। ম্যারাডোনা একা নন। গোল করতে পারেননি পেড্রো ত্রগলিও। তার ডান পায়ের শট সাইড পোস্টে লেগে ফেরত আসে। তবে বুরুচাগা, সেরিজুয়েলা আর দেজোত্তি ঠিক গোল করেন। যুগোশ্লাভিয়ার তারকা ড্রাগন স্কয়োকোভিচের শট পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়।

কিন্তু গায়কোচিয়া ব্রনোভিচ আর হাজিবেগিজ এর পেনাল্টি শট রুখে দিয়ে ঠিক দল জিতিয়ে দেন। প্রথমবার নিজের ডানদিকে ব্রুনোভিচের নীচু ডাইভ আটকে দেন গায়কোচিয়া। পরের বার উল্টো দিকে ঝাঁপিয়ে হাজিবেগের শট প্রতিহত করেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক।

৩-২ গোলে জিতে সেমিফাইনালে উঠে যায় আর্জেন্টিনা। সেমির যুদ্ধে স্বাগতিক ইতালির বিপক্ষে আবার আর্জেন্টিনার জয়ের নায়ক গায়কোচিয়া। একা দলকে টেনে তোলেন।

স্বাগতিক ইতালি খেলার ১৭ মিনিটে এস সিলাচির গোলে এগিয়ে গেলেও ক্যানেজিয়া ৬৭ মিনিটে সমতা ফিরিয়ে আনেন। ১২০ মিনিটের লড়াই শেষে সেমিফাইনাল গড়ায় টাইব্রেকারে। এবার অবশ্য ম্যারডোনা ঠিকই গোল করেন এবং আর্জেন্টিনা জয়ী হয় ৪-৩ গোলে। ম্যারাডোনাসহ আর্জেন্টিনার পক্ষে গোল করেন সেরিজুয়েলা, বুরুচাগা ও ওলার্তিকোয়েকা।

অন্যদিকে ইতালির পক্ষে ফ্র্যাঙ্কো বারেসি, রবার্তো ব্যাজিও আর ডি অগাস্তিনি গোল করলেও পারেননি তারকা মিডফিল্ডার ডোনাডুনি আর সোরেনা। তাদের শট আটকে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তোলেন আবার সেই গায়কোচিয়া। অবশ্য ফাইনালে আর জার্মানদের দাপটের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারেনি ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি থেকে ব্রেমার করা গোলে ১-০ গোলের ব্যবধানে জার্মানরা জিতে নেয় বিশ্বকাপ শিরোপা।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog