1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন

হাঙ্গেরিতে পানি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ৭ দফা প্রস্তাব

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৬
  • ২৫৯ বার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে ঐক‌্যবদ্ধ হয়ে এখনই উদ‌্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে গঠিত পানি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেলের সদস‌্য শেখ হাসিনা এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “পানি নিরাপত্তাই এ পৃথিবীর মানুষের মর্যাদার্পূণ ও মঙ্গলময় জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারে। সেই লক্ষ‌্য র্অজনে আমাদের অবশ‌্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে, আর তা এই মুর্হূত থেকেই। এক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ।”

শেখ হাসিনা বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ন এবং অপরিকল্পিত শিল্পায়নের এই সময়ে পানির কারণে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে এবং রাষ্ট্রের ভেতরে বৈষম্য ও বিভেদ তীব্রতর হচ্ছে। কাজেই পানির সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও এর সদ্ব‌্যবহারের ওপর সমষ্টিগতভাবে নজর দিতে হবে।

“তাতে কেবল পানি নিয়ে বৈষম্যই দূর হবে না, সমাজে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে, কেননা বিশ্বে অনেক উত্তেজনা ও সংঘাতের মূলে রয়েছে এই পানি।”

গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে পানি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প‌্যানেল বৈঠকে ‘কল টু অ্যাকশন’ গ্রহণ এবং পানিকে রাষ্ট্রের সব নীতি ও কাজে অগ্রাধিকার দিতে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের প্রতি আহ্বান জানানোর কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

সেই সঙ্গে পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাত দফা প্রস্তব তিনি সম্মেলনে উপস্থিত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

১. এজেন্ডা ২০৩০ এ টেকসই উন্নয়ন ও পানির মধ‌্যে যে আন্তঃসম্পর্কের কথা বলা হয়েছে, সে অনুযায়ী জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে যে কোনো উন্নয়ন প্রচেষ্টার আলোচনায় পানির বিষয়ও থাকতে হবে।

২ বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের সুপেয় পানি ও ন‌্যূনতম পয়ঃনিষ্কাশন চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, কারণ পানির যে সরবরাহ রয়েছে তার পর্যাপ্ত ও নিরাপদ নয়। এক্ষেত্রে সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ, বিশেষ করে দরিদ্র, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

৩. যেসব দেশ জলবায়ু পারিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে, তাদের সবচেয়ে বেশি সমস‌্যায় পড়তে হচ্ছে পানির কারণে। কাজেই পানি সংক্রান্ত দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা গড়ে তোলা জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন প্রক্রিয়াকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে।

৪. পানি নিয়ে আজকের এই সঙ্কট এর অপ্রতুলতার জন্য নয়, সুষম বণ্টনের অভাবে তৈরি হয়েছে। এর একটি স্থায়ী ও টেকসই সমাধান হতে পারে আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ব্যবস্থাপনা।

৫. কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন‌্য পানি জরুরি। আমাদের অবশ্যই কম পানি লাগে এমন ফসল এবং পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তির উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে।

৬. যেসব উদ‌্যোগ একটি দেশকে পথ দেখাচ্ছে, তা অন‌্যদের সঙ্গে অবশ‌্যই বিনিময় করতে হবে, যাতে পানি সম্পদের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করতে জ্ঞান, ক্ষমতা, দক্ষতা ও কৌশলের উন্নয়ন ঘটানো যায়।

৭. পানি সংক্রান্ত লক্ষ্য পূরণে অর্থায়নের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি বিষয়ে গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য একটি আন্তর্জাতিক হতবিল গড়ে তুলতে হবে এবং এর সুফল সবচে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, মানসম্মত স্যানিটেশন, পানি ও বিশুদ্ধতার অভাবে প্রতি বছর প্রায় পৌনে সাত লাখ মানুষের প্রাণহানি এবং অনেক দেশের জিডিপির প্রায় ৭ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে।

বর্তমানে বিশ্বে ২৪০ কোটি মানুষ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধার বাইরে রয়েছে এবং অন্তত ৬৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে না।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সংক্রান্ত লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের করণীয় নির্ধারণ এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত পানি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ বুদাপেস্টে তিন দিনের এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য।

পানিকে সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং পরিবেশের ভারসাম‌্যের মৌল ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করে এই সম্মেলনের আয়োজন করায় হাঙ্গেরি সরকারকে ধন‌্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের দর্শন, সংস্কৃতি, জীবন ও জীবিকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে পানি। আর এমন এক দেশ এই পানি সম্মেলনের আয়োজন করেছে, সেই হাঙ্গেরি পানি নিরাপত্তার জন‌্য বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। ২০১৩ সালের বুদাপেস্ট পানি সম্মেলনই পানি নিয়ে এসডিজির ধারণাগত ভিত্তি দিয়েছে।

বাংলাদেশে নিরাপদ পানির জন্য এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা ইতোমধ‌্যে পূরণ এবং ৬৫ শতাংশ মানুষের জন‌্য উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা নিশ্চিত করার তথ‌্য প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “২০২১ সালের মধ্যে সকলের জন্য সুপেয় পানি এবং মোট জনসংখ্যার অন্তত ৯০ শতাংশের জন্য উন্নত পয়াঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।”

শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং বাংলাদেশের সতর্কতা ব্যবস্থা, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও সমুদ্র উপকূলে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার উদ‌্যোগ বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

তিনি জানান, বর্ষায় পানির আধিক্য এবং শুকনো মৌসুমে খরার মত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এই সঙ্কট আরও প্রকট হয়ে উঠেছে কারণ বাংলাদেশের ভূ-উপরিস্থ পানির ৯২ শতাংশের উৎপত্তিস্থল সীমান্তের বাইরে।

“অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন একটি জটিল বিষয়। বাংলাদেশ গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে দুই দশক আগে ভারতের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করেছে। পানি বিষয়ে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতাও সঠিক পথেই এগোচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রী সকালে সম্মেলনস্থলে পৌঁছে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট হানোস আদেরসহ প্লেনারি হলে উপস্থিত অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

সম্মেলনে স্বাগত ভাষণ দেন হানোস আদের। এরপর জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের ভিডিও বক্তব‌্য প্রচার করা হয়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আগে মরিশাসের প্রেসিডেন্ট আমিনাহ্ গারিব ফাকিম এবং তাজাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাহমান বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি পিটার থমসন এবং বিশ্ব ব্যাংকের অর্থনীতি বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা জোয়াকিম লেভি বক্তব্য দেন। সবশেষে ওয়ার্ল্ড ওয়াটার কাউন্সিলের সভাপতি বেনোদিতো ব্রাগা বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী অতিথিদের সঙ্গে ‘সাসটেনেইবল ওয়ার্ল্ড সলিউশনস এক্সপো’ পরিদর্শন করেন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog