প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে ত্রুটির ঘটনায় করা মামলায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নয় কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তী আসামিদের উপস্থিতিতে এ আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই লিয়াকত আলী।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম নয় আসামিকে ১০ দিনের হেফাজতে নিতে চাইলেও বিচারক ৭ দিন মঞ্জুর করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আব্দুল্লাহ আবু ও অ্যাডভোকেট কাজি নজিবুল্লাহ হিরু।
রিমান্ডের আবেদন থেকে উদ্ধৃত করে এসআই লিয়াকত বলেন, “আসমিরা পরস্পর যোগসাজশে ষড়যন্ত্র করে ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রুটি ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। আসামিরা ষড়যন্ত্র করে যন্ত্রপাতি ত্রুটি করে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালিয়েছে।
“রহস্য উদ্ঘাটন এবং মূল ষড়যন্ত্রে সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত, গ্রেপ্তার ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রত্যেকের ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।” উড়োজাহাজের এই ‘বি’ নাটটি ঢিলা (লাল পাইপের) পাওয়া গিয়েছিল; পাশের অয়েল সেন্সর লাইনে (কালো পাইপ) কাজ হয়েছিল তার কয়েক দিন আগে
গত ২৭ নভেম্বর হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়। ইঞ্জিন অয়েলের ট্যাংকের একটি নাট ঢিলা থাকায় ওই বিপত্তি ঘটে।
এর পেছনে নাশকতা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে বিমান মন্ত্রণালয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ তিনটি তদন্ত কমিটি করে।
প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ঘটনার তিন দিনের মাথায় ছয় কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আরও তিন প্রকৌশলী সাময়িক বরখাস্ত হন।
এরপর মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানায় বরখাস্ত নয় জনকে আসামি করে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(গ) ধারায় মামলা করেন বিমানের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট) এস এম আসাদুজ্জামান।
এজাহারে বলা হয়, বিভাগীয় তদন্তে ওই নয়জনের বিরুদ্ধে ‘পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি নিয়ে অবহেলামূলক আচরণের মধ্য দিয়ে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম করার’ প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ঢাকার মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির মাহমুদ চৌধুরী আগামী ১২ জানুয়ারি দিন ঠিক করে দিয়েছেন।
মামলার দুই দিনের মাথায় বুধবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সাত আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরা হলেন- বিমানের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (প্রোডাকশন) দেবেশ চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) এস এ সিদ্দিক, ভারপ্রাপ্ত মুখ্য প্রকৌশলী (এনসিসি) বিল্লাল হোসেন, প্রকৌশলী কর্মকর্তা লুৎফর রহমান, সামিউল হক, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস ও জাকির হোসাইন।
তাদের আদালতে নেওয়ার আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিমানের এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার পর কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ মামলাটির তদন্তের ভার পেয়েছে।
ত্রুটির কারণে জরুরি অবতরণের পর তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাত বিমানবন্দরে বিমানের বোয়িং উড়োজাহাজটি
“আসামিদের খুব সময়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাওয়া গেছে। তদন্তে তাদের কাজে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। সেটা কোনো বৃহত্তর ষডযন্ত্রের অংশ কি না সেই বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।”
মামলার অপর দুই আসামি বিমানের জুনিয়র টেকনিশিয়ান মো. সিদ্দিকুর রহমান ও প্রকৌশলী কর্মকর্তা এস এম রোকনুজ্জামান বৃহস্পতিবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে একই বিচারক তা নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পিপি আব্দুল্লাহ বলেন, “বিচারকের নির্দেশ অনুযায়ী ওই দুই জন (মো. সিদ্দিকুর রহমান এবং এস এম রোকনুজ্জামান) রিমান্ডে যাবে, কারাগারে নয়।”