প্রতিবেদক: অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে আবারো সময় প্রার্থনা করলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সময় আবেদনের বিষয়টি এলেই আপনি রাষ্ট্রপতির বিষয় টানেন। রাষ্ট্রপতি সবার শ্রদ্ধেয়, তাকে কেন টানেন? তার দোহাই যখন দেন তখন আমাদের কষ্ট লাগে।’
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এসব কথা বলেন। এরপর তার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য আগামী ৮ মে পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করে বিষয়টি মূলতবি করেন।
এর ফলে গেজেট প্রকাশে আবারো সময় পেল সরকার। তবে আদালত মনে করিয়ে দেন, ‘আমরা সময় দিলাম। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি এরপর আর কোন অজুহাত থাকবে না।’
এর আগেও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বেশ কয়েক দফা সময় দিলেও এ সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট আকারে প্রকাশ করতে পারেনি সরকার। বিধিমালা প্রণয়ন না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ১২ ডিসেম্বর তলবও করেন আপিল বিভাগ।
২৭ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ গেজেট প্রকাশের জন্য ৪ সপ্তাহের সময়ের আবেদন করলে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে জানান, আইন মন্ত্রণালয় আশা করছে বিধিমালার বিষয়ে রাষ্ট্রপতি চার সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। এ কথার জবাবে আপিল বিভাগ বলেন, ‘এটা তো প্রেসিডেন্সিয়াল গর্ভনমেন্ট না। সংসদীয় ব্যবস্থায় আপনি বারবার কেন রাষ্ট্রপতিকে টেনে আনছেন।’
গত ১১ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয় থেকে এক নোটিশে জানানো হয়, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই বলে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ গেজেট প্রকাশ করতে রাষ্ট্রপক্ষকে এক সপ্তাহ সময় দেন। এরপর নির্ধারিত তারিখেও গেজেট প্রণয়ন না হওয়ায় ৮ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিবকে তলব করে আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা ২ জানুয়ারি আদালতে হাজির হন।
গত বছরের ৭ নভেম্বর বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা ২৪ নভেম্বরের মধ্যে গেজেট আকারে প্রণয়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।
কিন্তু সরকার যে রুলস তৈরি করে তা সুপ্রিম কোর্টের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। কারণ মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ১২ দফার মধ্যে ৭ম দফায় বলা আছে, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য যে রুলস ফ্রেম করা হবে, তাতে শাসন বিভাগের চেয়ে বিচার বিভাগের মতামত প্রাধান্য পাবে।
১২ দফার মধ্যে বেশ কয়েক দফা বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এ জন্য বারবার আদেশ দিতে হয়েছে আপিল বিভাগকে। এমনকি ২০০৪ সালে আদালত অবমাননার মামলাও করতে হয়েছে বাদীপক্ষকে। এরপর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক ঘোষণা করে।
২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি আপিল বিভাগ বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত চারটি বিধিমালা সাত দিনের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশের নির্দেশ দেন। তবে এ সংক্রান্ত মামলাটি এখনও আপিল বিভাগে বিচারাধীন।